ফর্ম ১৬ দিয়ে আইটিআর ফাইল করা: একটি সম্পূর্ণ গাইড

আপনার কোম্পানি থেকে ফর্ম 16 এসেছে? অভিনন্দন! আপনার আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার 90% কাজ আপনি ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! ফর্ম 16 শুধু একটা ডকুমেন্ট নয়, বরং আপনার ট্যাক্স ফাইলিং-এর সবচেয়ে বড় সহায়ক। এই গাইডে আমরা জানবো কিভাবে এই ডকুমেন্টটিকে কাজে লাগিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই, কোনো জটিল ভাষায় না গিয়ে, খুব সহজে আপনার আইটিআর ফাইল করবেন।

চলুন, শুরু করি আমাদের যাত্রা!

বেসিক বিষয়গুলো পরিষ্কার করে নেওয়া যাক

ফর্ম 16 আসলে কী?

খুব সহজ কথায়, ফর্ম 16 হল আপনার কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা দেওয়া একটি সার্টিফিকেট। এতে লেখা থাকে যে আপনার বেতন থেকে কত টাকা আয়কর (TDS) কেটে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি আসলে একটি TDS (Tax Deducted at Source) সার্টিফিকেট।

ফর্ম 16-এর কয়টি অংশ থাকে?

ফর্ম 16-এ দুটি অংশ থাকে:

পার্ট এ (Part A): এই অংশে আপনার এবং আপনার নিয়োগকর্তার বেসিক তথ্য থাকে, যেমন- PAN, TAN, ঠিকানা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এখানে কোয়ার্টার অনুযায়ী দেখানো হয় কত টাকা বেতন দেওয়া হয়েছে এবং সেই বেতন থেকে কত টাকা TDS কেটেছে।

পার্ট বি (Part B): এই অংশটি আরও বিস্তারিত। এখানে আপনার বেতনের বিভিন্ন অংশের হিসাব থাকে, যেমন- বেসিক স্যালারি, HRA, অন্যান্য ভাতা, আপনার দেওয়া বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্টের হিসাব (যেমন 80C এর অধীনে PF, LIC ইত্যাদি) এবং সবশেষে আপনার ট্যাক্সেবল ইনকাম (Taxable Income) কত তা উল্লেখ থাকে।

ফর্ম 16 পাওয়ার নিয়ম কী?

আয়কর আইন, 1961-এর সেকশন 203 অনুযায়ী, আপনার নিয়োগকর্তা বাধ্য আপনাকে 31শে মে-এর মধ্যে ফর্ম 16 দিতে। যদি আপনি কোম্পানি ছেড়ে চলে যান, তাহলেও আপনার ছাড়পত্র (Relieving Letter) পাওয়ার সময় বা তার পরবর্তী কিছুদিনের মধ্যে তাদের ফর্ম 16 দেওয়া উচিত।


ধাপে ধাপে আইটিআর ফাইল করার প্রক্রিয়া (ফর্ম 16 সহকারে)

এবার আসা যাক মূল কাজে। চলুন ধাপে ধাপে দেখি কিভাবে ফাইল করবেন।

প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস হাতে রাখুন

আইটিআর ফাইল করার আগে একটা ফাইল বানিয়ে এই সব জিনিস রেখে দিন:

  1. ফর্ম 16: এটাই আপনার প্রধান ডকুমেন্ট।
  2. PAN কার্ড: আপনার পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর।
  3. আধার কার্ড: ই-ভেরিফিকেশনের জন্য লাগবে।
  4. ব্যাংক স্টেটমেন্ট: আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপজিট (FD) থেকে কোনো সুদ পেয়েছেন কিনা তা চেক করার জন্য।
  5. ইনভেস্টমেন্টের প্রমাণ: যেমন- PPF, NSC, LIC প্রিমিয়াম, ELSS মিউচুয়াল ফান্ডের স্টেটমেন্ট, হোম লোনের সার্টিফিকেট (যদি থাকে)। এগুলো ডেডাকশন ক্লেম করার কাজে লাগবে।
  6. পূর্ববর্তী বছরের আইটিআর-এর কপি: এটা না থাকলেও চলে, কিন্তু থাকলে ভালো।

সঠিক আইটিআর ফর্ম বেছে নিন

এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভুল ফর্ম বেছে নিলে আপনার আইটিআর ‘ডিফেক্টিভ’ হয়ে যেতে পারে।

  • ITR-1 (Sahaj): যদি আপনি একজন সাধারণ চাকুরিজীবী হন, আপনার বার্ষিক আয় 50 লাখ টাকার কম হয়, এবং আপনার বেতন ছাড়া অন্য কোনো আয় (যেমন শেয়ার বিক্রি থেকে লাভ বা ক্যাপিটাল গেইনস) না থাকে, তাহলে ITR-1 আপনার জন্য।
  • ITR-2: যদি আপনার আয় 50 লাখের বেশি হয়, বা আপনি শেয়ার থেকে লাভ/ক্ষতি করে থাকেন, বা একাধিক বাড়ি থেকে ভাড়া আয় থাকে, তাহলে আপনাকে ITR-2 ফর্ম ব্যবহার করতে হবে।

আপনার মোট আয় গণনা করুন

এখন ফর্ম 16 আর অন্যান্য ডকুমেন্টস নিয়ে বসুন।

  • বেতন থেকে আয় (Income from Salary): ফর্ম 16-এর পার্ট বি-তে “Gross Salary” লেখা আছে, সেটাই আপনার বেতন থেকে মোট আয়। আপনাকে আইটিআর ফর্মের ‘Income from Salary’ সেকশনে এই তথ্যটি ঢোকাতে হবে।
  • অন্যান্য আয় (Other Income): মনে রাখবেন, ফর্ম 16-এ শুধুমাত্র আপনার বেতনের হিসাব থাকে। আপনার ব্যাংকে সুদ (Interest Income) পেয়েছেন? কোনো FD থেকে সুদ পেয়েছেন? এগুলো আপনাকে নিজে হিসাব করে ‘Income from Other Sources’ সেকশনে যোগ করতে হবে।

উদাহরণ: ধরুন, রমেশ বাবুর ফর্ম 16-এ বেতন দেখাচ্ছে 8 লাখ টাকা। তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে বোঝা গেল সেভিংস অ্যাকাউন্টে 10,000 টাকা এবং FD থেকে 20,000 টাকা সুদ পেয়েছেন। তাহলে তার মোট আয় হবে 8 লাখ + 10,000 + 20,000 = 8.30 লাখ টাকা।

ডেডাকশন (করমুক্ত সীমা) ক্লেম করুন

এটাই সেই সুবিধাজনক অংশ যেখানে আপনি ট্যাক্স বাঁচাতে পারেন। ফর্ম 16-এর পার্ট বি-তে আপনার কোম্পানি যে ডেডাকশনগুলো ধরেছে, সেগুলো চেক করুন। কিন্তু সেখানে সবকিছু থাকতেও পারে না!

  • সেকশন 80C: এর অধীনে সর্বোচ্চ 1.5 লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট ও খরচের জন্য ডেডাকশন পাওয়া যায়। যেমন- PF, PPF, LIC, ELSS, হোম লোনের মূলধন পরিশোধ, সন্তানের স্কুল ফিস ইত্যাদি। আপনার কোম্পানি হয়তো PF আর LIC ধরেছে, কিন্তু আপনি NSS-এ টাকা রেখেছেন, সেটা যোগ করে নিতে হবে।
  • সেকশন 80D: স্বাস্থ্যবিমা (Mediclaim) প্রিমিয়ামের জন্য ডেডাকশন পাওয়া যায়।
  • সেকশন 80E: হায়ার এডুকেশন লোনের সুদের জন্য ডেডাকশন পাওয়া যায়।

চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসাব করুন

এবার খেলা শেষের পর্যায়।

  • আপনার মোট আয় (ধাপ ৩) থেকে সব ডেডাকশন (ধাপ ৪) বাদ দিন। বাকি থাকল আপনার ট্যাক্সেবল ইনকাম
  • এই ট্যাক্সেবল ইনকামের উপর ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী কত ট্যাক্স হবে, সেটা হিসাব করুন।
  • এবার ফর্ম 16-এর পার্ট এ-তে দেখুন “Total TDS” কত। এই TDS-এর সাথে আপনার হিসাব করা ট্যাক্সের তুলনা করুন।
    • যদি TDS > হিসাব করা ট্যাক্স: অভিনন্দন! আপনি রিফান্ড পাবেন।
    • যদি TDS < হিসাব করা ট্যাক্স: আপনাকে বাকি টাকা ‘Self-Assessment Tax’ হিসেবে জমা দিতে হবে।

অনলাইনে ফাইল করুন

  1. ভিজিট করুন অফিসিয়াল ইনকাম ট্যাক্স পোর্টাল www.incometax.gov.in
  2. আপনার PAN ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
  3. ‘e-File’ ট্যাবে যান এবং ‘Income Tax Return’ সিলেক্ট করুন।
  4. অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার (যেটি ফাইল করছেন, যেমন- AY 2024-25) এবং আপনার সঠিক ITR ফর্ম (যেমন- ITR-1) সিলেক্ট করুন।
  5. সুবিধা: পোর্টাল আপনার ফর্ম 16 এবং অন্যান্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি ‘Pre-filled’ আইটিআর ফর্ম দেবে। আপনাকে শুধু সেটা চেক করে দেখতে হবে সব তথ্য ঠিক আছে কিনা।
  6. যেসব তথ্য মিসিং থাকবে (যেমন ব্যাংক সুদ, অন্যান্য ডেডাকশন), সেগুলো আপনাকে ম্যানুয়ালি ভরতে হবে।
  7. সব ঠিক থাকলে, ট্যাক্স ক্যালকুলেটর দিয়ে আবার একবার চেক করে নিন ট্যাক্স বা রিফান্ডের পরিমাণ।
  8. ফর্মটি সেভ করে ‘Preview & Submit’ করুন।
  9. সাবমিট করার পর আপনি ই-ভেরিফিকেশনের জন্য অপশন পাবেন। আধার ওটিপি, নেট ব্যাংকিং বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডেবিট কার্ড দিয়ে খুব সহজেই ভেরিফাই করে ফেলুন। ভেরিফিকেশন না করলে আপনার আইটিআর ফাইলিং সম্পূর্ণ হবে না।

সুবিধা, অসুবিধা ও সতর্কতামূলক বিষয়

ফর্ম ১৬ ব্যবহারের সুবিধা (Pros):

  • সময় বাঁচে: আপনার বেতনের বেশিরভাগ তথ্যই এতে থাকে, তাই আইটিআর ফাইল করতে অনেক কম সময় লাগে।
  • নির্ভুলতা: নিয়োগকর্তার দেওয়া তথ্য সাধারণত নির্ভুল হয়, যা গণনার ভুল এড়াতে সাহায্য করে।
  • TDS ক্লেম করা সহজ: আপনি যে ট্যাক্স কেটেছেন, সেই প্রমাণ আপনার কাছে থাকে, যা রিফান্ড পেতে সাহায্য করে।

অসুবিধা ও সতর্কতামূলক বিষয় (Cons & Things to Look Out For):

  • ভুল তথ্য: ফর্ম 16-এ আপনার নাম, PAN বা ঠিকানা ভুল থাকতে পারে। সাবমিট করার আগে এগুলো ভালো করে চেক করুন। ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য আপনার কোম্পানির HR/অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করুন।
  • অন্যান্য আয় দেখানো হয় না: এটাই সবচেয়ে বড় ফাঁদ। ফর্ম 16-এ শুধু বেতন থাকে। আপনি যদি বাড়ি ভাড় দিয়ে থাকেন, বা শেয়ার থেকে আয় করে থাকেন, সেই আয় আপনাকে নিজে থেকে দেখাতে হবে। লুকিয়ে গেলে পরে আয়কর বিভাগের নোটিস আসতে পারে এবং জরিমানা হতে পারে।
  • ডেডাকশন মিসিং: আপনার কোম্পানি হয়তো আপনার সব ডেডাকশন ধরেনি। যেমন, আপনি ডোনেশন দিয়েছেন (সেকশন 80G) বা নতুন কোনো পলিসি করেছেন। এগুলো আপনাকে নিজে যোগ করে নিতে হবে।
  • চাকরি পরিবর্তন: যদি আপনি একই আর্থিক বছরে দুটি ভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেন, তাহলে আপনি দুটি আলাদা ফর্ম 16 পাবেন। আইটিআর ফাইল করার সময় দুটি ফর্মের বেতন এবং TDS উভয়ই যোগ করে নিতে হবে। অনেকে ভুলে যান, যার ফলে তাদের আয় কম দেখায় এবং পরে ঝামেলায় পড়তে হয়।
  • ফর্ম 16 না পাওয়া: যদি আপনার কোম্পানি ফর্ম 16 না দেয়, তাহলে আপনি আপনার বেতনের স্লিপ এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে আয় হিসাব করে আইটিআর ফাইল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার Form 26AS চেক করে নিতে হবে যে আপনার বেতন থেকে কত TDS জমা হয়েছে। Form 26AS হল আপনার সব ধরনের ট্যাক্স পেমেন্টের একটি বিস্তারিত লেজার।

কিছু কারিগরি বিষয় ও মনে রাখার টিপস (Technical Details & Tips to Remember)

এই পর্বে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা সাধারণত অনেকেই এড়িয়ে যায়, কিন্তু যার গুরুত্ব অপরিসীম।

১. ফর্ম 16 আর ফর্ম 26AS-এর মিল মেলানো

এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

  • ফর্ম 16: আপনার নিয়োগকর্তা দেয়। এতে শুধুমাত্র আপনার বেতন থেকে কাটা ট্যাক্সের (TDS) হিসাব থাকে।
  • ফর্ম 26AS: এটা আয়কর বিভাগের ডাটাবেস। এতে আপনার PAN কার্ডের বিরুদ্ধে সব ধরনের TDS রেকর্ড থাকে। যেমন- আপনার ব্যাংক থেকে সুদের উপর কাটা ট্যাক্স, কোনো ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে পাওয়া টাকার উপর কাটা ট্যাক্স ইত্যাদি।

কী করবেন? আইটিআর ফাইল করার আগে অবশ্যই আপনার ইনকাম ট্যাক্স পোর্টাল থেকে ফর্ম 26AS ডাউনলোড করুন। এবার ফর্ম 16-এর পার্ট এ-তে দেওয়া TDS-এর সাথে ফর্ম 26AS-এ দেখানো TDS-এর পরিমাণ মিলিয়ে নিন। যদি দুটো মিলে না যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার নিয়োগকর্তা হয়তো ট্যাক্স কেটেও জমা দেয়নি। এক্ষেত্রে আপনাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। নতুবা আপনি ট্যাক্স ক্রেডিট পাবেন না।

২. বেতনের গঠন (Salary Structure) বোঝা

ফর্ম 16-এর পার্ট বি-তে আপনি অনেক কিছু দেখতে পাবেন। সেগুলো বোঝা জরুরি।

  • Perquisite (বিশেষ সুবিধা): কোম্পানি যদি আপনাকে গাড়ি, বাড়ি বা অন্য কোনো সুবিধা দেয়, তার একটা আর্থিক মূল্য ধরে সেটাকে আপনার আয়ের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। একে বলে পার্ক। এটাও আপনার ট্যাক্সেবল ইনকাম-এর অংশ।
  • Standard Deduction: সব চাকুরিজীবীরা তাদের মোট বেতন থেকে 50,000 টাকা পর্যন্ত একটা স্ট্যান্ডার্ড ডেডাকশন পান। এটা ফর্ম 16-তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়, কিন্তু আপনার জানা উচিত যে এই সুবিধাটা আপনি পাচ্ছেন।

৩. বাড়ি থেকে আয় (Income from House Property) – একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট

আপনার যদি একটি বাড়ি থাকে যেটিতে আপনি নিজে থাকেন (Self-occupied), তবুও আপনাকে আইটিআর-এ এই খাতটি দেখাতে হবে।

  • আইন অনুযায়ী, একটি আবাসিক বাড়ি যদি নিজে থাকার জন্য খালি রাখা হয়, তবে এর থেকে বার্ষিক আয় ধরা হয় Nil
  • কিন্তু যদি আপনি সেই বাড়ির জন্য হোম লোন নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার হোম লোনের সুদের উপর সেকশন 24(B)-এর অধীনে ডেডাকশন ক্লেম করতে পারেন। এই ডেডাকশন আপনার অন্যান্য আয় (যেমন বেতন) থেকে কাটা যাবে, যা আপনার ট্যাক্স কমাবে। স্ব-অধ্যুষিত বাড়ির ক্ষেত্রে এই সুদের ডেডাকশনের সীমা হল বার্ষিক ₹2 লাখ।

টিপস: ফর্ম 16-এ এই হোম লোনের সুদের তথ্য থাকবে না। আপনাকে নিজে হোম লোন প্রদানকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বছরের শেষে সার্টিফিকেট নিয়ে সেই অনুযায়ী আইটিআর-এ এই ডেডাকশন ক্লেম করতে হবে।

৪. নতুন বনাম পুরনো কর ব্যবস্থা (New vs. Old Tax Regime)

এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনার কোম্পানি হয়তো ফর্ম 16 তৈরি করার সময় পুরনো কর ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছে (যেখানে ডেডাকশন যেমন 80C, 80D ইত্যাদি পাওয়া যায়)। কিন্তু আইটিআর ফাইল করার সময় আপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে নতুন কর ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার (যেখানে ট্যাক্সের হার কম, কিন্তু বেশিরভাগ ডেডাকশন পাওয়া যায় না)।

কী করবেন? আইটিআর ফাইল করার সময় পোর্টাল আপনাকে দুটি অপশন দেবে। আপনি দুটোতেই আপনার ট্যাক্স হিসাব করে দেখতে পারেন কোন ব্যবস্থায় আপনার ট্যাক্স কম হচ্ছে। যেটাতে কম ট্যাক্স হবে, সেটি বেছে নিন। এটি একটা খুব সাধারণ ভুল যেখানে মানুষ ফর্ম 16-এ যা দেখানো হয়েছে, তাই মেনে নেয়। মনে রাখবেন, ফাইলিং-এর সময় এই পছন্দটি সম্পূর্ণ আপনার।

৫. সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ট্যাক্স (Self-Assessment Tax)

যদি আপনার হিসাব করে দেখেন যে আপনার মোট ট্যাক্স দায় আপনার ফর্ম 16-এ কাটা TDS-এর থেকে বেশি, তাহলে আপনাকে বাকি টাকা আইটিআর ফাইল করার আগেই জমা দিতে হবে। একে বলে সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ট্যাক্স।

কীভাবে জমা দেবেন? আপনাকে আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘e-Pay Tax’ অপশনে গিয়ে চালান আইটিএনএস 280(Challan ITNS 280) ব্যবহার করে অনলাইনে এই ট্যাক্স জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পর, আপনি একটি BSR কোড এবং চালান সিরিয়াল নম্বর (Challan Serial Number) পাবেন। এই তথ্যগুলো আপনাকে আইটিআর ফর্মের নির্দিষ্ট ঘরে ঢোকাতে হবে। এই ট্যাক্স জমা না দিয়ে আইটিআর ফাইল করলে সেটি অসম্পূর্ণ বলে গণ্য হবে।

৬. ই-ভেরিফিকেশনের বিভিন্ন উপায়

আইটিআর সাবমিট করার পর ভেরিফিকেশন করা অত্যন্ত জরুরি। আধার ওটিপি ছাড়াও আরও কয়েকটি উপায়ে আপনি ভেরিফাই করতে পারেন:

  • নেট ব্যাংকিং: আপনার ব্যাংকের নেট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ভেরিফাই করতে পারেন।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ₹1 টাকার একটি ডেবিট নির্দেশ দিয়ে ভেরিফাই করতে পারেন।
  • ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট: যাদের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট আছে, তারা সেখান থেকেও ভেরিফাই করতে পারেন।

মনে রাখবেন: আইটিআর সাবমিট করার পর থেকে 120 দিনের মধ্যে ভেরিফিকেশন করতে হবে। নতুবা আপনার আইটিআর বাতিল হয়ে যাবে এবং আপনাকে আবার নতুন করে ফাইল করতে হবে।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নিয়মাবলী

  • আইটিআর ফাইলিং-এর শেষ তারিখ: সাধারণত, যাদের অডিট করার প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য আয়কর আইনের সেকশন 139(1) অনুযায়ী আইটিআর ফাইল করার শেষ তারিখ হল 31st July (যদি সরকার সময়সীমা না বাড়ায়)। এই তারিখের পরে ফাইল করলে জরিমানা লাগতে পারে।
  • বিলম্বিত ফাইলিং-এর জরিমানা: যদি আপনি 31st July-র মধ্যে ফাইল করতে না পারেন, তবে সেকশন 234F অনুযায়ী সর্বোচ্চ 5,000 টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
  • ট্যাক্স পরিশোধে বিলম্ব: যদি আপনার হিসাব অনুযায়ী ট্যাক্স বাকি থাকে এবং আপনি তা 31st March মধ্যে পরিশোধ না করেন, তবে সেকশন 234B অনুযায়ী সুদের ওপর সুদ দিতে হবে।

শেষ কথা

দেখুন, ফর্ম 16 দিয়ে আইটিআর ফাইল করা কোনো রকেট সায়েন্স নয়। এটি একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া। শুধু একটু ধৈর্য ধরে ধাপগুলো অনুসরণ করলেই আপনি নিজেই এই কাজটি করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে আইটিআর ফাইল করা আপনাকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করে এবং ভবিষ্যতে অনেক আর্থিক কাজে (যেমন লোন নেওয়া) সাহায্য করে।

যদি কোথাও আটকে যান, তাহলে অফিসিয়াল ইনকাম ট্যাক্স ওয়েবসাইটের হেল্পডেস্ক বা একজন ভালো ট্যাক্স প্র্যাকটিশনারের সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু নিজে চেষ্টা করে দেখুন, আপনি পারবেনই!

শুভ কামনা রইল আপনার আইটিআর ফাইলিং-এর জন্য!

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।