কিভাবে CA ছাড়া নিজেই ITR (Income Tax Return) ফাইল করবেন

কেন নিজে হাতে ITR ফাইল করবেন?

আয়কর রিটার্ন ফাইল করা শুধু আইনত বাধ্যতামূলক নয়, এটি একটি আর্থিক দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। অনেকেই ভয় পান বা মনে করেন যে এই কাজটি খুব জটিল এবং একজন CA-এর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আজকাল ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অধীনে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের পোর্টাল (www.incometax.gov.in) এতটাই ব্যবহারবান্ধব হয়ে উঠেছে যে, বেশিরভাগ বেতনভোগী ব্যক্তি এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা নিজেদের রিটার্ন ফাইল করতে পারেন। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই বাঁচে এবং নিজের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়।


ভিত্তিভূমি ও প্রস্তুতি

কাদের ITR ফাইল করা বাধ্যতামূলক? (Rules & Regulations)

আয়কর আইন, 1961-এর ধারা 139 অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন ফাইল করা আবশ্যক:

  • যাদের মোট আয় বেসিক এক্সেম্পশন লিমিটের উপরে (অর্থাৎ, ₹2.5 লক্ষ, ₹3 লক্ষ বা ₹5 লক্ষ – বয়স অনুযায়ী)।
  • যারা বিদেশে কোনো সম্পত্তি বা আর্থিক স্বার্থ রাখেন।
  • যাদের আয়ের উৎস থেকে TDS (Tax Deducted at Source) বা TCS (Tax Collected at Source) কেটে নেওয়া হয়েছে, যদিও তাদের আয় এক্সেম্পশন লিমিটের নিচে হয়।*
  • যারা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বিদেশী মুদ্রায় ব্যয় করেছেন।
  • যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি জমা পড়েছে।

* যদি মোট আয় exemption limit-এর নিচে থাকে, তাহলে সেই TDS/TCS ফেরত পাওয়ার জন্য ITR ফাইল করতেই হবে। অর্থাৎ, ITR must ফাইল করতে হবে refund claim করার জন্য। তবে “legally mandatory” নয় — এটি beneficial বা practical necessity

বাস্তব উদাহরণ: রাজত একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তার বার্ষিক বেতন ₹15 লক্ষ টাকা। যেহেতু তার আয় ₹2.5 লক্ষ টাকার বেসিক লিমিটের উপরে, তাই তাকে অবশ্যই ITR ফাইল করতে হবে।

সঠিক ITR ফর্ম নির্বাচন করা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া। ভুল ফর্ম বেছে নিলে রিটার্ন অবৈধ (“defective”) হয়ে যেতে পারে।

  • ITR-1 (SAHAJ): যাদের আয়ের উৎস হলো বেতন, একটি বাড়ির থেকে ভাড়া (কিন্তু ওই বাড়ি থেকে ক্ষতি দেখানো যাবে না), এবং অন্যান্য উৎস (সুদ, ডিভিডেন্ড)। মোট আয় ₹50 লক্ষ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
  • ITR-2: যাদের আয়ের উৎস বেতন, একাধিক বাড়ি থেকে ভাড়া, ক্যাপিটাল গেইনস (শেয়ার, সম্পত্তি বিক্রি), বা বিদেশি আয়। যারা HUF (Hindu Undivided Family) হিসেবেও আয় করেন, তারাও এই ফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।
  • ITR-4 (SUGAM): Presumptive Taxation Scheme-এর আওতাভুক্ত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের জন্য (যেমন, ডাক্তার, ওয়েব ডিজাইনার, কনসালট্যান্ট)। তাদের আয় ₹50 লক্ষ বা ₹75 লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে।

উদাহরণ: মিতা একজন সরকারি কর্মচারী এবং তার বার্ষিক বেতন ₹8 লক্ষ টাকা। তার কিছু ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সুদ আসে। তিনি ITR-1 ফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। অন্যদিকে, সৌম্য একজন ফ্রিল্যান্সার যার আয় ₹20 লক্ষ টাকা এবং তিনি Presumptive Taxation Scheme-এর অধীনে, তাই তার জন্য ITR-4 সঠিক।

প্রয়োজনীয় নথিপত্র (Documents Checklist)

ফাইলিং শুরু করার আগে এই নথিগুলো হাতের কাছে রাখুন:

  • PAN Card: আপনার স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর (PAN) আবশ্যক।
  • Aadhaar Card: ই-ভেরিফিকেশনের জন্য লিঙ্কড আধার কার্ড।
  • Form 16: আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে এই সার্টিফিকেট দেবে। এতে আপনার বেতন, বিভিন্ন ভাতা, TDS কাটা এবং বিভিন্ন ধারায় আপনার দাবি করা ডেডাকশনের (যেমন 80C) বিবরণ থাকে।
  • Form 16A/16B/16C: যদি আপনি ব্যাংক থেকে সুদ পান বা কোনো সম্পত্তি বিক্রি করেন বা ভাড়া দেন, তাহলে TDS কাটা হলে এই ফর্মগুলি পাবেন।
  • Bank Statements: আপনার সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট, যাতে আপনি সুদের আয় এবং অন্যান্য আয় যাচাই করতে পারেন।
  • Investment Proofs (for Deductions):
    • Section 80C: PPF, EPF, ELSS, জীবন বীমা, সন্তানের স্কুল ফি, হোম লোনের মূল অংশ পরিশোধের প্রমাণ। (সর্বোচ্চ ₹1.5 লক্ষ)
    • Section 80D: মেডিক্লেম বীমার প্রিমিয়ামের প্রমাণ।
    • Section 80E: শিক্ষা ঋণের সুদের প্রমাণ।
  • Tax Paid Challans (Self-assessment Tax): যদি আপনি কোনো অতিরিক্ত ট্যাক্স নিজে জমা দিয়ে থাকেন, তার রশিদ।

New Tax Regime-এ কোনও ধরনের deduction বা exemption (যেমন Section 24(b), 80C, 80D ইত্যাদি) প্রযোজ্য নয়


ধাপে ধাপে ITR ফাইল করার প্রক্রিয়া (Income Tax Portal)

ধাপ ১: লগইন করুন

  • অফিসিয়াল ইনকাম ট্যাক্স পোর্টাল www.incometax.gov.in-এ যান।
  • আপনার PAN এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। নতুন হলে ‘Register Yourself’ অপশনে ক্লিক করে নিবন্ধন করুন।

ধাপ ২: ফাইলিং শুরু করুন

  • ড্যাশবোর্ডে ‘e-File’ ট্যাবে যান এবং ‘File Income Tax Return’ এ ক্লিক করুন।
  • Assessment Year (মূল্যায়ন বছর) নির্বাচন করুন। যেমন, ১লা এপ্রিল ২০২৩ থেকে ৩১শে মার্চ ২০২৪-এর আয়ের জন্য Assessment Year হবে AY 2024-25
  • আপনার স্ট্যাটাস (Individual, HUF ইত্যাদি) নির্বাচন করুন।
  • আপনি কীভাবে ফাইল করতে চান তা নির্বাচন করুন: ‘Online’ বা ‘Offline’। নতুনদের জন্য ‘Online’ সহজ।

ধাপ ৩: সঠিক ITR ফর্ম বেছে নিন

  • পোর্টাল আপনার আয়ের উৎসের উপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন করবে। সেই উত্তরের ভিত্তিতে এটি আপনাকে সঠিক ITR ফর্ম (যেমন ITR-1) বেছে নিতে সাহায্য করবে। আপনি ম্যানুয়ালিও বেছে নিতে পারেন।

ধাপ ৪: বিবরণ পূরণ করুন (Pre-filling এবং যাচাইকরণ)

  • আধুনিক পোর্টালের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ‘Pre-filled Data’। আপনার Form 16, Form 26AS (TDS/TCS এবং ট্যাক্স পেমেন্টের বিবরণ) এবং AIS (Annual Information Statement) থেকে আয়ের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মে ভরে যাবে।
  • সতর্কতা: প্রি-ফিলড ডেটা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। আপনাকে এই ডেটা আপনার Form 16 এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টের সাথে তুলনা করে যাচাই করে নিতে হবে। কোনো তথ্য মিসিং থাকলে তা ম্যানুয়ালি যোগ করুন।
  • Deductions (ডেডাকশন): ‘Schedule VI-A’ অংশে আপনার সমস্ত ডেডাকশনের বিবরণ (80C, 80D ইত্যাদি) ভরুন। আপনার বিনিয়োগের প্রমাণ অনুযায়ী এই তথ্য সঠিক হওয়া আবশ্যক।
  • Taxes Paid (পরিশোধিত কর): প্রি-ফিলড ডেটাতে TDS এবং আপনি যদি সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ট্যাক্স জমা দিয়ে থাকেন, সেই তথ্যও থাকবে। এটি যাচাই করুন।

ধাপ ৫: ট্যাক্স হিসাব এবং রিফান্ড/ট্যাক্স পেমেন্ট

  • সমস্ত তথ্য পূরণ করার পর, পোর্টাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার মোট ট্যাক্স দায় এবং পরিশোধিত ট্যাক্সের হিসাব করবে।
  • যদি ট্যাক্স বাকি থাকে: আপনাকে ‘Pay Tax’ অপশনে ক্লিক করে বাকি ট্যাক্স (Self-Assessment Tax) জমা দিতে হবে।
  • যদি রিফান্ড হয়: আপনি রিফান্ড পাবেন কিনা তা দেখাবে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড সঠিকভাবে দিন, যাতে রিফান্ড সহজে আসে।

ধাপ ৬: রিটার্ন জমা দেওয়া (Submit Return)

  • সবকিছু সঠিক আছে কিনা আবার চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করুন।
  • ‘Preview and Submit’ বাটনে ক্লিক করে আপনার রিটার্নের একটি সারসংক্ষেপ দেখুন।
  • সব ঠিক থাকলে, ‘Proceed to Submission’ এ ক্লিক করুন।

ধাপ ৭: ই-ভেরিফিকেশন (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ)

  • শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে না, আপনাকে তা ভেরিফাই করতে হবে। ভেরিফিকেশন না করলে আপনার রিটার্ন ফাইলিং অসম্পূর্ণ বলে গণ্য হবে।
  • আপনার কাছে ভেরিফিকেশনের জন্য ৩০ দিন সময় থাকে।
  • ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি:
    1. Aadhaar OTP: সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি OTP আসবে, সেটি দিয়ে তাৎক্ষণিক ভেরিফাই করুন।
    2. Net Banking: আপনার ব্যাংকের নেট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে ভেরিফাই করতে পারেন।
    3. Bank ATM: আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে লিঙ্কড ATM কার্ড দিয়ে ভেরিফাই করার সুবিধাও আছে।
    4. Sending ITR-V to CPC: যদি উপরের কোনো পদ্ধতিই কাজ না করে, তাহলে ITR-V (Acknowledgement) ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন, স্বাক্ষর করুন এবং তা বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টার (CPC)-এ পাঠাতে হবে। এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও কৌশল

সুবিধা ও অসুবিধা (Pros & Cons)

সুবিধা অসুবিধা
সাশ্রয়ী: CA-এর ফি বাঁচে।ঝুঁকি: ভুল হলে নোটিস পাওয়ার সম্ভাবনা।
নিজের আর্থিক জ্ঞান বৃদ্ধি: নিজের আয়-ব্যয় ও ট্যাক্স সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হয়।সময়-সাপেক্ষ: প্রথমবারের জন্য অনেক সময় লাগতে পারে।
নিয়ন্ত্রণ: নিজের সমস্ত তথ্য নিজে যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।জটিলতা: যদি আয়ের উৎস একাধিক ও জটিল হয় (যেমন ক্যাপিটাল গেইনস, ব্যবসায়িক আয়), তাহলে নিজে করা কঠিন হতে পারে।
দ্রুততা: একবার শিখে গেলে পরের বছর খুব দ্রুত করতে পারবেন।আপডেটের অভাব: নতুন নিয়মকানুন বা ডেডাকশন সম্পর্কে অবগত না থাকলে সুবিধা মিস হতে পারে।

মনে রাখার বিষয় (Things to Keep in Mind)

  • ডেডলাইন: সাধারণত আয়কর রিটার্ন ফাইল করার শেষ তারিখ হয় ৩১শে জুলাই (যদি না সরকারি ভাবে সময়সীমা বাড়ানো হয়)। দেরি করলে জরিমানা দিতে হতে পারে।
  • Form 26AS এবং AIS যাচাই করুন: ফাইলিং শুরু করার আগে আপনার Form 26AS এবং Annual Information Statement (AIS) ডাউনলোড করে দেখুন। এতে আপনার সমস্ত TDS, TCS, উচ্চ-মূল্যের লেনদেন এবং আর্থিক লেনদেনের হিসাব থাকে। এই ডেটা আপনার রিটার্নের সাথে মিল আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • সঠিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: রিফান্ড পাওয়ার জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড সঠিকভাবে দিন। অ্যাকাউন্টটি আপনার PAN-এর সাথে লিঙ্ক হওয়া উচিত।
  • সব আয় দেখান: ব্যাংকে সুদ, ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়, বা অন্য কোনো ছোটখাটো আয় যতই কম হোক না কেন, সবই দেখানো উচিত। আয়কর বিভাগের কাছে আপনার সমস্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য থাকে। আয় গোপন করলে তা পরে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • রেকর্ড রাখুন: আপনার ফাইল করা ITR, ITR-V (যদি পাঠিয়ে থাকেন), ট্যাক্স পেমেন্টের রশিদ এবং সমস্ত সাপোর্টিং ডকুমেন্টস অন্তত ৬ বছরের জন্য সাবধানে সংরক্ষণ করুন।

সব বিষয় এড়িয়ে চলবেন (Must Avoid Things)

  • ভুল ITR ফর্ম বেছে নেওয়া: এটি সবচেয়ে বড় ভুল। এর ফলে আপনার রিটার্ন ‘defective’ হয়ে যেতে পারে এবং আপনাকে আবার নতুন করে ফাইল করতে হতে পারে।
  • ই-ভেরিফিকেশন ভুলে যাওয়া: রিটার্ন জমা দেওয়ার পর ই-ভেরিফিকেশন না করলে সেটি অসম্পূর্ণ বলে গণ্য হয়। এটি কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না।
  • ডেটা মিসম্যাচ: আপনার Form 16, Form 26AS এবং আপনার ITR-এর মধ্যে কোনো তথ্যের গরমিল থাকা উচিত নয়। যেমন, আপনার বেতনের পরিমাণ বা TDS-এর পরিমাণ সব জায়গায় একই রকম হতে হবে।
  • ডেডাকশন দাবি করার জন্য মিথ্যা তথ্য: যেসব বিনিয়োগ বা খরচ আপনি করেননি, সেগুলোর জন্য ডেডাকশন দাবি করবেন না। ট্যাক্স বিভাগ যেকোনো সময় আপনার ক্লেমের প্রমাণ চাইতে পারে।
  • পুরনো রেগুলেশন অনুসরণ করা: ট্যাক্সের নিয়মকানুন প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। পুরনো বছরের নিয়ম মেনে চলবেন না। বর্তমান আর্থিক বছরের নিয়ম অনুযায়ী ফাইল করুন।

সরঞ্জাম ও কৌশল

১. ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালের বাইরে অন্যান্য সরঞ্জাম (Tools Available)

যদিও অফিসিয়াল পোর্টালই সেরা, তবে কিছু বেসরকারি সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট আছে যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করে তুলতে পারে।

  • ClearTax, TaxBuddy, Quicko, myITreturn ইত্যাদি: এগুলো জনপ্রিয় ট্যাক্স ফাইলিং প্ল্যাটফর্ম।
    • সুবিধা: এগুলোর ইউজার ইন্টারফেস খুব সহজ, স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইডেন্স দেয়, প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করে এবং অনেক সময় ফ্রি প্ল্যানও থাকে।
    • সুবিধা: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নাও হতে পারে, বিশেষ করে জটিল রিটার্নের জন্য। ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে একটু চিন্তা থাকতে পারে।
  • মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন: কিছু প্ল্যাটফর্ম মোবাইল অ্যাপও অফার করে, যা ফাইলিংকে আরও সহজ করে তোলে।

নোট: এই সরঞ্জামগুলো শুধুমাত্র একটি মাধ্যম। চূড়ান্ত জমা দেওয়া এবং ভেরিফিকেশন সবসময় ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের সার্ভারেই হয়।

২. সেরা কৌশলগুলো (Best Strategies)

  • বছরব্যাপী ট্যাক্স প্ল্যানিং: মার্চ মাসে এসে হঠাৎ করে বিনিয়োগ করবেন না। বছরের শুরু থেকেই পরিকল্পনা করুন কীভাবে আপনি Section 80C, 80D ইত্যাদির অধীনে সর্বোচ্চ ডেডাকশন পেতে পারেন।
  • নতুন বনাম পুরনো ট্যাক্স রেজিম: প্রতি বছর আপনার জন্য কোন ট্যাক্স রেজিম (New Tax Regime বা Old Tax Regime) লাভজনক হবে, তা হিসাব করে দেখুন। নতুন রেজিমে ডেডাকশনের সুবিধা কম কিন্তু ট্যাক্সের হার কম। আপনার ডেডাকশনের পরিমাণের উপর এটি নির্ভর করে।
  • Form 16 পাওয়ার আগেই প্রস্তুতি নিন: আপনার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে Form 16 পাওয়ার অপেক্ষা না করে, আপনার বেতনের স্লিপ এবং বিনিয়োগের প্রমাণ নিয়ে একটি খসড়া হিসাব তৈরি করে রাখুন। এতে ফাইলিংয়ের সময় সময় বাঁচবে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট রেকর্ড রাখুন: সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট একটা ফোল্ডারে সংরক্ষণ করুন। এতে কোনো আয় বা খরচ মিস হবে না।

উপসংহার

CA ছাড়া নিজে আয়কর রিটার্ন ফাইল করা আর কোনো রকম রকেট সায়েন্স নয়। এটি একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া, যার প্রতিটি ধাপ ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে অনুসরণ করলে সফলতা আসে। হয়তো প্রথমবার একটু সময় লাগবে, কিছু প্রশ্ন মাথায় আসবে, কিন্তু একবার আপনি এই প্রক্রিয়াটি বুঝে গেলে, তা আপনার আর্থিক জীবনে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস যোগ করবে।

মনে রাখবেন, আয়কর দেওয়া শুধু একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য নয়, বরং এটি দেশের উন্নয়নে আপনার অংশগ্রহণ। নিজে হাতে রিটার্ন ফাইল করার মানে হলো আপনি নিজের আর্থিক দায়িত্বগুলো বুঝতে এবং পালন করতে একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই ভয়কে দূরে সরিয়ে রাখুন, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করুন, এবং নিজেই আপনার আয়কর রিটার্ন ফাইল করে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ এতেই আরও সুরক্ষিত হবে।

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।